কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়?

কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়: প্রিয় স্যার/ম্যাম, আপনি কি আপনার বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তিত ?নিশ্চই আপনার বাচ্চা পড়াশোনায় অমনোযোগী বা পড়তে একদমি চায় না। অথচ আপনার অনেক সপ্ন আপনার সন্তানকে নিয়ে। এরকম টা যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।

কেননা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, কিভাবে আপনি আপনার কলিজার টুকরা বাচ্চাকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে পারবেন এ বিষয়ে বিস্তারিত। তাই ধের্য সহকারে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। চলুন শুরু করা যাক।

কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়?

কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়?

পড়াশোনাটা বাচ্চাদের কাছে যে খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার তা কিন্তু মোটেই নয়। সাধারণত বর্তমানে খুব কমন একটা সমস্যা পাওয়া যায় যে, বাচ্চার বুদ্ধি ভালো, কিন্তু পরতে চায় না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, কি কি কাজ করলে আপনার বাচ্চা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে।

১.পড়ার সময় বাচ্চাদের বকা ও মারা যাবে না:

আপনার কি মনে হয়, আপনার বাচ্চাকে বকাঝকা ও মারলেই কি সে পড়াশোনা মনোযোগী হয়ে উঠবে? উত্তর অবশ্যই না। বরং পড়ার সময় বাচ্চাদের বকাঝকা করলে বাচ্চাকে পড়ার প্রতি মনোযোগ আরো নষ্ট হয়ে যায় ভিতরে ঢুকে যায় ভয়, ভীতি ও আতঙ্ক। হয়তো বাচ্চাকে বকলে মারলে সেই সময়ের জন্য ভয়ে পড়া পড়ে নেয়, কিন্তু পড়ার প্রতি মূল আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই পড়ার সময় বাচ্চাদের বোকা ও মারা বন্ধ করুন।

২. বাচ্চাদেরকে প্রশংসা করুন:

বাচ্চাদেরকে যদি কোন অংক বা যেকোন কোন কিছু যদি লিখতে দেন বা মুখে বলতে বলেন যদি সে লিখতে ও বলতে পারে তাহলে খাতায় Good লিখে দিবেন বা মুখে খুব প্রশংসা করবেন। এতে করে বাচ্চারা পড়াশুনায় উৎসাহী ও প্রশংসিত হয়ে আরো পড়তে বসতে চাইবে।

আর যদি ভুল করে ফেলে তাহলে তাকে বার বার বুঝিয়ে সেটি পুনরায় আবার আপনার সামনে করতে বলবেন। বাচ্চাদের ছোট মনে ছোট প্রফুল্ল। সেটাকে ধরে রেখেই ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে প্রশংসা করে পড়াশোনায় মনোযোগী করা সম্ভব।

৩.নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন:

আপনার বাচ্চার জন্য পড়াশোনার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। এছাড়া এই নির্দিষ্ট টাইমে আপনার বাচ্চা কি কি পড়বে তা তালিকা করে ফেলুন। আর এই রুটিন ও তালিকা করার সময় অবশ্যই আপনার বাচ্চাকে সাথে রাখবেন তার মতামত নিবেন।

এই রুটিন করার ফলে আপনার বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, খেলাধুলা করার মত এই পড়াশোনাটাও তার কাছে প্রতিদিনের অভ্যাসের মতো মনে হবে, তখন আর জোর করে পড়াতে বসাতে হবে না। নিজে নিজেই পড়তে বসবে। 

৪.পড়তে বসার স্থান নির্বাচন:

আপনার সন্তান যেখানে পড়তে বসবে সেই জায়গাটি যেন হর হামেশায় ঘেড়া না থাকে। কেননা, বাচ্চাদের মনোযোগ স্থায়ীভাবে ধরে রাখার ক্ষমতা খুবই কম। একটু কিছু আশেপাশের আওয়াজ আসলে চমকে সে দিকে তাকায়।

তাই বাচ্চাকে এমন পরিবেশে পড়াতে বসাবেন না যেখানে পাশের ঘর থেকে টিভির আওয়াজ আসে, বা কেউ ফোন বাজাচ্ছে এমন আওয়াজ আসে, কেউ জোরে কথা বলছে এমন আওয়াজ আসে ইত্যাদি। মনে রাখবেন, বাচ্চা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল শান্ত পরিবেশ।

৫.বাচ্চাদের জীবনে লক্ষ্য স্থির করতে হবে:

বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার অন্যতম প্রধান উপায় হলো, বাচ্চাকে কেন পড়াশোনা করতে হবে এই বিষয়টি কারো কাছে ক্লিয়ার করে বলা। এমনকি পরানোর সময় প্রত্যেকবার, একবার হলেও বলবেন আম্মু, আব্বু তোমাকে শিক্ষক, ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার.. হতে হলে তোমাকে পড়তে হবে। 

এ বিষয়ে বিভিন্ন গল্প শোনান, বেশি বেশি উৎসাহিত করুন। একটা সময় দেখবেন আপনার বাচ্চার মনে নিজে নিজেই পড়ার প্রতি একটা আগ্রহ চলে আসবে।

৬. ধৈর্যের সাথে পড়াতে হবে: 

সব বাচ্চা কিন্তু সমান নয়। দেখবেন কোন বাচ্চাকে একটা বিষয় একবার বুঝালেই বুঝতে পারে, আবার কোন বাচ্চাকে বারবার বুঝালেও সে বিষয়টা বুঝতে পারে না। তাই আপনার সন্তান আপনি ভালো বলতে পারবেন তাকে কিভাবে বুঝালে সে বুঝবে। 

আপনার সন্তান কিভাবে এবং কতবারে পড়া বুঝবে সেই সময়টুকু আপনাকে ধৈর্যের সাথে তাকে পড়াতে হবে। আপনার সন্তান যদি ভালো লিখতে ও পড়তে না পারে তাহলে আপনি ব্যর্থ।কেননা, আপনার সন্তান ঠিকমতো বোঝেনি, আপনি ঠিকমতো বুঝাতে পারেননি । তাই সন্তানকে ধৈর্য সহকারে পড়াতে হবে।

৭. অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা করবেন না: 

পড়াশুনার ব্যাপারে কখনোই অন্য বাচ্চাদের সাথে আপনার বাচ্চার তুলনা করবেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন যে এভাবে বললে হয়তো আপনার বাচ্চার মনে জেদ কাজ করবে, তখন পড়াশুনা করবে। কিন্তু এটা হয়না বরং এর উল্টোটা হয় অর্থাৎ আপনার বাচ্চা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।

৮.বাচ্চাকে নির্দিষ্ট পড়ার জন্য উপহার দিন:

বাচ্চাকে নির্দিষ্ট পড়ার জন্য উপহার দিন। অর্থাৎ বাচ্চাকে দৈনন্দিন একটা পড়া দিলেন আর বললেন এই পড়াটা তুমি শেষ করলে তোমার জন্য একটা বিশেষ উপহার রয়েছে। 

এতে বাচ্চার মনে খুশি খুশি ভাব সৃষ্টি হয় এবং নির্দিষ্ট করা শেষ করে উপহার নিতে চায়। উপহার বলতে চকলেট, সুন্দর একটি ড্রেস,পেন, পেন্সিল ও ড্রইংসেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। বড় বড় কিছু দিতে যাবেন না, বায়না শিখবে।

৯.খেলাধুলা ও ভ্রমণ:

বাচ্চাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে খেলাধুলা অত্যন্ত চমৎকার একটি উপায়। গবেষণায় জানা গেছে, যে শিশুর শারীরিক ফিটনেস যত বেশি ভালো, সে পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারে এজন্য খেলাধুলার জন্য একটি টাইম ঠিক করে রাখতে পারেন।

এছাড়াও বাচ্চাদের বুদ্ধি বিকাশে ও পড়াশোনায় মনোযোগী করতে বাচ্চাকে সাথে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান। যেখানে আপনার বাচ্চা ঘুরতে ভালোবাসে। 

১০.পড়াশুনা নিয়ে বাচ্চাদের চাপ দেওয়া যাবে না: 

পড়াশুনা নিয়ে বাচ্চাকে অতিরিক্ত শাসক করতে যাবেন না।একবারে বাচ্চার পড়াশোনার মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা না করে, অল্প অল্প করে সময় নিয়ে পড়াবেন। অনেক এমন মা বাবা আছে, যারা নিজের অপূর্ণ স্বপ্নকে বাচ্চার মাধ্যমে পূরণ করতে চায়। 

এবং সেই জন্যই তাদের ওপর ছোট থেকেই প্রচুর পরিমাণে পড়াশোনা করার জন্য প্রেসার দিয়ে থাকে।যা একসময় আত্নবিশ্বাস ও নিজের ভেতরে হীনমন্যতায় উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

শেষ কথা:

সবশেষে একটাই কথা, আপনার সন্তানের দায়িত্ব কিন্তু আপনাকে নিতে হবে (যতদূর সম্ভব)। তাই তার সমস্ত পড়াশোনার দিক গুলো আপনাকেই আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে।

আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায় এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url