পরীক্ষার খাতায় কিভাবে লিখবেন
প্রিয় শিক্ষার্থী, আপনি অনেক পড়াশোনা করলেন কিন্তু সেই জ্ঞানকে পরীক্ষার খাতায় যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে কোন লাভ নেই। আবার অল্প পড়েও যদি আপনি টেকনিক খাটিয়ে ভালো মার্কস অর্জন করতে চান তাহলে আপনাকে পরীক্ষার খাতায় কিভাবে লিখতে হয় তার কৌশলগুলো জানতে হবে।
শিক্ষক আপনি কতটা পড়েছেন তা দেখবেন না, আপনি কতটা খাতায় যুক্তিসঙ্গত লিখেছেন তা দেখে আপনার যোগ্যতা নির্বাচন করবেন। কাজেই সামান্য একটু অসতর্কতা বা ভুলের কারণে আপনার স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। পরীক্ষা দেওয়ার আগে আপনারা অবশ্যই আজকের এই পয়েন্টগুলো ফলো করে পরীক্ষা দিতে যাবেন।
আপনি অনার্সের স্টুডেন্ট কিংবা ইন্টারের স্টুডেন্ট অথবা নিম্ন মাধ্যমিক/মাধ্যমিক হন না কেন সবার জন্য আজকের এই পয়েন্ট গুলো খুবই ইম্পোর্টেন্ট। তাহলে চলুন পয়েন্টগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
পরীক্ষার খাতায় কিভাবে লিখবেন:
১. প্রথমে খাতা পেয়ে খুবই সতর্কতার সাথে রেজিস্ট্রেশন এবং রোল নাম্বার ও বিষয় কোড পূরণ করুন। যদি আপনি এখানে একটু ভুল করেন তাহলে আপনি নির্ঘাত ফেল।
২. এবার পেন্সিল অথবা নীল কলম দিয়ে মার্জিন টানুন। উপরে এবং বাম পাশে অবশ্যই এক ইঞ্চি ফাঁকা রেখে মার্জিন টানবেন।
৩. যে প্রশ্নটি আপনি অনেক ভাল পারেন সেই প্রশ্নটি আগে লেখা শুরু করুন। এর কারণ হলো শিক্ষকরা খাতা কাটার সময় প্রথম দিকে আপনার লেখাগুলো ভালোভাবে পড়ে বোঝার চেষ্টা করেন আপনি ছাত্র হিসেবে কেমন। যদি শিক্ষকরা প্রথমদিকে আপনার প্রশ্নগুলো যুক্তিসঙ্গত এবং সঠিক মনে করেন তাহলে পরেরগুলোতে আপনার উত্তর একটু খারাপ হলেও যথাযথ মার্কস পাবেন।
৪. প্যারাগ্রাফ ব্রেক করে করে লিখুন। অর্থাৎ ৪/৫ লাইন লেখার পর একটু ফাঁকা করে করে লিখুন। এতে আপনার লেখা সুন্দর দেখাবে এবং শিক্ষকের পড়তে বুঝতে সুবিধা হবে।
৫. বানান ভুল করা যাবে না সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। আপনার উত্তর গুলোর কঠিন বানানগুলো আগে থেকে দেখে যাবেন। বানানগুলো আলাদা পৃষ্ঠায় বাসায় প্র্যাকটিস করবেন।
৬. যতটুকু জানেন ততটুকু লিখবেন। অপ্রয়োজনীয় বা ভুল কিছু লিখবেন না।অনেক বেশি লিখলে যে ভালো নাম্বার পাবেন এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যদি আপনি যুক্তিসঙ্গত এবং সঠিক উত্তর দিতে পারেন সেটা পরিমাণে কম হলেও ফুল মার্কস পাবেন। এটা বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. চেষ্টা করবেন হাতের লেখা যেন সুন্দর হয়। হাতের লেখা সুন্দর হলে আপনি প্রতিটা প্রশ্নের কমপক্ষে আধা বা এক মার্ক করে বেশি পাবেন। হাতের লেখা সুন্দর করতে গিয়ে স্লোভাবে লেখা যাবে না।
৮. সময়ের দিকে সবসময় খেয়াল রেখে লিখুন। কারন আপনি একটা প্রশ্ন লিখতে যদি অনেক বেশি সময় ব্যয় করে ফেলেন তাহলে শেষে দেখবেন আপনার প্রশ্ন আরও লেখা বাকি রয়ে গেছে কিন্তু সময় শেষ।
৯. প্রশ্ন হাতে পেয়ে প্রশ্নটি অবশ্যই ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যদি মনোযোগ সহকারে প্রশ্নটি না পারেন তাহলে অনেক সময় আমরা ভুলে যাই যে কোন প্রশ্নটি এসেছে। ফলে একটা প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে আর একটা লিখে ফেলি। অথবা একটা জানা প্রশ্নের উত্তর আমাদের মনে হয় যে সেটা আমরা এটা পারি না।
১০. সময় কম থাকলে লুজ শিটে মার্জিন টানার প্রয়োজন নেই। শুধু উপরে এবং বাঁদিকে এবং ডানদিকে ভাঁজ করে নিবেন। লুজ শিট নেওয়ার সাথে সাথে নাম্বারটি মূল খাতায় লিখে রাখবেন। তা না হলে পরে মনে থাকবে না।
১১. সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসবেন। কোন প্রশ্ন বাদ রাখবেন না। সময় না থাকলে একটু কম করে লিখবেন অথবা বাড়ি থেকে হিসাব করে যাবেন কোন প্রশ্নের জন্য কত মিনিট লিখবেন।
১২. মার্জিন এর বাইরে কোন কিছু লেখা যাবে না যেমন প্রশ্নের নাম্বার প্যারাগ্রাফ পয়েন্ট নাম্বার ইত্যাদি।
১৩. লেখায় কাটাকাটি ঘষাঘষি করা যাবে না। এতে লেখা সৌন্দর্য একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। যদি ভুলবশত কোন লেখা ভুল হয় তাহলে সেটা একটানে কেটে দিবেন।
১৪. চেষ্টা করবেন প্রশ্নের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী উত্তর দিতে। এতে খাতা কাটা সহজ হয় এবং পরীক্ষক অনেক খুশি হন।
১৫. নতুন প্রশ্নের উত্তরের জন্য নতুন পৃষ্ঠা নির্বাচন করা ভালো। তবে অতিরিক্ত জায়গা বাদ থাকলে তা উচিত নয়।
১৫. সব সময় চোখ-কান খোলা রেখে পরীক্ষা দিবেন। ঘন্টা এবং সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। পরীক্ষার শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে লেখা শেষ করবেন এবং ১৫ মিনিট ভালোভাবে রিভিশন দিবেন। এতে ভুল ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন হবে।
আমাদের শেষকথা:
একটা কথা মাথায় রাখবেন পরীক্ষার খাতায় এমন কিছু লিখবেন না বা এমন কিছু করে আসবেন না যাতে শিক্ষকের মাথা গরম হয়ে যায়। আর শিক্ষক যদি একবার মাথা খারাপ হয় তাহলে আপনাকে কিন্তু বিদায় বা ফেল জানাতে পারে।
আশা করছি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখতে হয় বেশি মার্ক পাওয়ার জন্য। আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যেন তারাও উপকৃত হতে পারে।