কখন কখন পানি পান করা উচিত - পানি পান করার সঠিক নিয়ম

কখন কখন পানি পান করা উচিতঃ পানি পান করলে আমাদের তৃষ্ণা মিটে। তৃষ্ণা মেটাতে পানির কোন বিকল্প নেই। পানির তৃষ্ণা মেটাতে আমরা কয়জনেই বা সঠিক নিয়মে পানি পান করি। পানির অপর নাম জীবন, এটা আমরা কমবেশি প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও সঠিক সময়ে সম্পর্কে জানেন কি? আজ আপনারা কখন কখন পানি পান করা উচিত এবং পানি পান করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাবেন।


কখন কখন পানি পান করা উচিত - পানি পান করার সঠিক নিয়ম


যখন তখন ইচ্ছা করলেই পানি পান করা যায় না। পানি আমাদের শরীরের মাত্রা ঠিক রাখে, ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে। ফলে একজন মানুষ সুস্থ ও নিরাপদ জীবন লাভ করতে পারে। তাই আমাদেরকে পানি পান করার সঠিক সময় সম্পর্কে অবগত হতে হবে।


কখন কখন পানি পান করবেন?


যদি আপনি সঠিক সময়ে নিয়মিত পানি পান না করেন তাহলে আপনার শরীরে নানা প্রকার রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে, গোসল করার আগে, ক্ষুধার্থ বোধ করলে এবং খাবারের আধঘন্টা আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।


মানুষ মাটির তৈরি। কিন্তু আপনি কি জানেন? মানবদেহের মাটির চেয়ে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। মানবদেহে ৭২ শতাংশ পানি এবং বাকি অংশ মাটি। তাই পানি পান করার কোন বিকল্প নেই। চলুন এখন কখন কখন পানি পান করতে হবে বা পানি পান করার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই


সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খেতে হবে


গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করলেই দেহের কর্মক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করলে দেহের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়।


আপনি ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করবেন না। ব্রাশ করার আগেই এক থেকে দুই গ্লাস খালি পেটে পানি পান করে নিবেন। তারপর ব্রাশ করতে যাবেন।


আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি তখন আমাদের মুখে এক ধরনের লালা থাকে। এই লালা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাশ করার ফলে লালাগুলো বের হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনি ব্রাশ করার আগে পানি খান তাহলে সেই পানির সাথে পেটের ভিতরে চলে যাবে। ৯০% রোগ এই লালা ঠিক করে দিতে পারে।


গোসলের আগে এক গ্লাস পানি খান


গোসল করার আগে আপনি এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন। এতে রক্ত চলাচল এর মাত্রা ঠিক থাকবে। দিনের অগ্রভাগে বেশি বেশি পানি পান এবং রাত যত বাড়তে থাকবে পানি পানের হার তত কমতে থাকবে, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।


খাবারের আধঘন্টা আগে পানি পান করুন


আপনি সকাল দুপুর এবং রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত আধঘন্টা আগে পানি পান করুন। এতে আপনার হজম শক্তি ভালো হবে। শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকবে।


ক্ষুধার্তবোধ করলেই পানি পান করুন


আপনি যদি ক্ষুধার্ত হন তাহলে আগে পানি পান করুন এবং কিছুক্ষণ পর খাবার খান। অনেকেই আছেন পিপাসিত হলেও পানির পিপাসা অনুভব করতে পারেন না। ফলে শরীরে পানি শূন্যতা থেকে যায় এবং নানা রোগ ব্যাধি আক্রমণ করে।


ঘুমানোর আগে পানি পান করুন


আপনি যখন ঘুমিয়ে যান তখন শরীর দিয়ে অনেক ঘাম ঝরে। ঘামের মাধ্যমেই শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। ফলে ঘুমানোর আগে পানি পান করলে সেই পানি শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়।


শরীরচর্চার আগে পানি পান করুন


যখন আপনি শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করবেন তার কিছুক্ষণ আগে পানি পান করে নেবেন। শরীরচর্চার ফাঁকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করতে হবে। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পানি পরিমাণ ঠিক থাকবে থাকবে।


পিরিয়ডের আগে পানি পান করুন


মাসিকের অস্বস্তি কাটাতে অবশ্যই পিরিয়ডের আগে প্রচুর পানি পান করুন। তাহলে পেটের ফোলাভাব ও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।


পানি পান করার সঠিক নিয়ম


কখন কখন পানি পান করা উচিত - পানি পান করার সঠিক নিয়ম


আপনারা অনেকেই ভাবতে পারেন পানি পান করার আবার সঠিক নিয়ম আছে নাকি। হ্যাঁ পানি পান করার বেশ কিছু নিয়ম কানুন আছে। সঠিক নিয়মে পানি পান না করলে আপনার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।


খাবার খাওয়ার পরপরই পানি পান করবেন না


আমরা কমবেশি প্রত্যেকেই খাবার শেষ করেই সাথে সাথে অনেক পরিমাণ পানি পান করি। যেটা বৈজ্ঞানিকভাবে ঠিক নয়। খাবার খাওয়ার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর পানি পান করা উচিত। কারণ খাবার হজম হতে ৩০ মিনিট সময় লাগে। অর্থাৎ প্রায় আধাঘন্টা লাগে পাচন প্রক্রিয়ার জন্য।


এই নিয়মে পানি পান না করলে পাচনতন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে আমাদের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। যেমনঃ হজম প্রক্রিয়ার সমস্যা ইত্যাদি। তাই ভাত খাবার পর পরই জল খাওয়া উচিত নয়।


চুমুক দিয়ে পানি খান


চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে গর গর করে নয় চুমুক দিয়ে পানি পান করা উচিত। চুমুক দিয়ে পানি পান করা হলো পানি পান করার সঠিক নিয়ম।


আমরা আমাদের মুখে অনেক লালা উৎপন্ন করি। লালা একটি ক্ষারীয় উপাদান এবং আমাদের পেটে হাইড্রোক্লোরিক এসিড আছে। আমাদের মুখের লালা সেই এসিডকে স্থির রাখে। ধক ধক করে পানি পান করলে শুধু পানি খাওয়াই হয় আমাদের পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছায় না। সম্পূর্ণ পরিবেশ তাই এসিড যুক্ত হয়ে থাকে। তাই অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে পানি পান করুন।


বসে পানি পান করুন


সব সময় বসে পানি পান করুন। ভুলেও দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না। আমাদের ধর্মীয় মতেও দাঁড়িয়ে পানি পান করা নিষিদ্ধ আছে। বৈজ্ঞানিকভাবে দাঁড়িয়ে পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।


বৈজ্ঞানিক ভাষায় যখন আমরা পানি পান করি তখন আমাদের শরীরের কয়েকটি স্থানে ছাকুনির মতো ছেকে আমাদের পাকস্থলীতে যায়। যদি আমরা দাঁড়িয়ে পানি পান করি তাহলে সেই ছাকুনি গুলো ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে না। সুতরাং পানির সাথে যদি কোন প্রকার ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তাহলে তা সরাসরি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।


অল্প অল্প করে পানি পান করুন


একবারে বেশি পানি পান না করে অল্প অল্প করে পানি পান করুন। অনেকেই আছেন একেবারে অনেক বেশি পানি পান করে থাকেন। পানি যেন একদম গিলে গিলে খান। এভাবে পানি পান করলে হঠাৎ শরীরে চাপ বেড়ে যায়। তাই অল্প অল্প করে পানি পান করুন।


হালকা গরম পানি পান করুন


অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। ঠান্ডা পানি আমাদের মুখের সাথে পাকস্থলীতেও ধাক্কা দেয়। তাই আপনারা হালকা গরম পানি পান করুন। ফলে আপনার দেহ এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।


শরীরে পানির মাত্রা যত বেশি থাকে প্রসবের মাত্রা তত বেশি হয়ে যায়। ফলে দেহে রোগ ব্যাধি বাসা বাধার সুযোগ পায় না। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন।


দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত


একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য দৈনিক আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত। অর্থাৎ দৈনিক ১০ থেকে ১২ ক্লাস পানি পান করা উচিত। তাই নিয়মিত আপনারা পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।


উপসংহার


প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা পানি পান করার সঠিক নিয়ম এবং কখন কখন পানি পান করতে হবে এই বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।


আজকের এই পোস্ট থেকে কিছু শিখতে পারলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার প্রিয় বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। যেন তারাও পানি খাওয়ার সঠিক সময়ে ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারে।

আর হ্যাঁ নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানাতে ভুলবেন না। এমনই নিত্যনতুন টিপস পাওয়ার জন্য আমাদের BioStatusBD.com (বায়োস্ট্যাটাস বিডি ডটকম) ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।


অন্য পোস্ট পড়ুন-

 শীতকালে কতটুকু পানি পান করা উচিত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url