ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর সুবিধা ও অসুবিধা
ফেসবুকের নতুন চমক প্রফেশনাল মোড বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকেরই আইডিতে চলে এসেছে। মেটা কোম্পানি ২০২১ সালে ফেসবুক প্রফেশনাল মোড ফিচারটি চালু করেন। ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর সুবিধা কি এবং অসুবিধা কি, এটি কেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরকে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কমপ্লিট ধারণা পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে ফেসবুককে টপকিয়ে উপরে দেওয়ার মতো অনেক নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম চলে এসেছে। যেমন টিকটক, লাইকি, স্নাক ভিডিও অ্যাপ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম গুলি ফেসবুকের দর্শকগণকে কেড়ে নিয়েছে। আগে যে পরিমাণ দর্শক ফেসবুকে সময় কাটাতো বর্তমানে তার অর্ধেক দর্শক tiktok এ চলে গিয়েছে।
এজন্য ফেসবুক একটির পর একটি নতুন নতুন ফিচার, নতুন নতুন আপডেট ফেসবুকে যুক্ত করছেন। যাতে দর্শকগণ পুনরায় ফেসবুকেই বেশি সময় কাটায়।
ফেসবুক ইতোমধ্যে প্রফেশনাল মোড চালু করেছেন। এটা সকল ফেসবুক ইউজারদের জন্য খুশির একটা বিষয়। কেননা ফেসবুক প্রোফেশনাল মোড অন করার মাধ্যমে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। ফেসবুক প্রফেশনাল এর কাজ কি তা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ফেসবুক প্রফেশনাল মোডে উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত চলুন আলোচনা করা যাক।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রফেশনাল মুড চালু করে পরবর্তীতে আপনি যেকোনো সময় ফেসবুক প্রফেশনাল মুড অফ করতে পারবেন। এফবি প্রফেশনাল মোড সুবিধাগুলো নিম্নে আলোচিত হলোঃ
প্রফেশনাল মোড চালু করলে অটোমেটিক আপনার প্রোফাইলে ফলো বাটন অ্যাড হয়ে যাবে। আপনার প্রোফাইলে কেউ যদি ঢোকে সেক্ষেত্রে সে ফলো বাটন দেখতে পারবে। যেকোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী আপনাকে ফলো করতে পারবে। তাছাড়া আপনার পাবলিক কনটেন্ট যেকোন ফেসবুক ব্যবহারকারী দেখতে পারবে।
আপনাকে ফলো করার জন্য যেকোনো ব্যক্তি চাইলে তার ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করতে পারবে। এজন্য আপনার প্রোফাইলে ঢুকে তিন ডট অপশনে ক্লিক করলে "Invite Friends" নামক একটি অপশন দেখা যাবে। সেখানে ক্লিক করে যে কোন ব্যক্তি তার ফ্রেন্ডদেরকে ইনভাইট পাঠাতে পারবে। ফলে আপনার ফলোয়ার্স বৃদ্ধি পাবে।
প্রফেশনাল মোড অন হয়ে গেলে ফেসবুক প্রোফাইল টাইপ পেজ এর মত প্রফেশনাল টুল পাবেন। সেখান থেকে প্রোফাইল ওভারভিউ দেখা যাবে। কোন একটা পোস্ট করলে কিংবা ভিডিও কনটেন্ট পাবলিশ করলে তার রিচ, এনগেজমেন্ট, নেট ফলোয়ার ইত্যাদি দেখা যাবে।
আপনার প্রোফাইলের ইন্ট্রো সেকশনে ক্যাটাগরি অ্যাড করা যাবে। আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করেন সেই ধরনের ক্যাটাগরি এড করতে পারবেন। ডিফল্ট হিসেবে Digital creator ক্যাটাগরিটি সিলেক্ট করা থাকে। তবে আপনি এডিট প্রোফাইলে গিয়ে ডিটেলস অপশন থেকে এটাকে চেঞ্জ করতে পারবেন।
আপনি আপনার পোস্টের প্রাইভেসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। প্রফেশনাল মোড চালু করার পরেও পোস্টের গোপনীয়তা আগের মতোই পাবলিক বা প্রাইভেট রাখতে পারবেন। যেখানে ফেসবুক পেজ থেকে কোনো পোস্ট ব্যক্তিগত রাখা সম্ভব না। আপনি যদি চান আপনার পোস্ট বা কনটেন্ট কেউ না দেখো তাহলে সেটা করা যাবে। অর্থাৎ প্রাইভেসি সুবিধা রয়েছে।
এলিজিবল প্রোফাইল কনটেন্ট এবং প্রোফাইল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিকট রিকমেন্ডেশন করবে ফেসবুক ফলে আপনি দ্রুত ভাইরাল হতে পারবেন এবং প্রচুর ফ্যানস ফলোয়ার বৃদ্ধি পাবে।
প্রফেশনাল মোড চালু করলে সেই আইডির প্রফেশনাল একটা ডিজাইন লুকস দেখা যাবে। ফলোয়ার্স এবং ফলোইং নামের নিচেই শো করবে যেটা দেখতে খুবই ভালো লাগে। এবং ফ্রেন্ডস এর তালিকা গুলো তার নিচেই শো করবে।
যেকোনো ব্যক্তি সেখানে ক্লিক করে ফলোয়ার ফলোইং এবং ফ্রেন্ডস দেখতে পারবে। তাছাড়া প্রোফাইলের নিচে এবাউট, পোস্ট, রিল, ফটো ইত্যাদি আলাদা আলাদা পার্টি ভাগ করা থাকবে।
যদি প্রফেশনাল মোড চালু থাকে তাহলে আপনার প্রোফাইলে ট্রান্সপারেন্সি সেকশন এ অধিক তথ্য প্রদর্শন করা হবে।
প্রফেশনাল মোড চালু থাকলে মডারেশন এসিস নামক একটি টুল পাবেন। এই অপশন এর মাধ্যমে আপনার যে কোন পোস্টে অথবা কনটেন্টের কমেন্টে অটোমেটিক মডারেট সেট করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি চাইলে দর্শকগণ কোন ধরনের কমেন্ট করতে পারবেনা সেগুলো যোগ করতে পারবেন।
যেকোনো পোস্টে কমেন্ট চালাও কিংবা বন্ধ করার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড অন করার সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে এলিজিবল ক্রিয়েটের গণ এখান থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। সরাসরি ক্রিয়েটরগন PayPal কিংবা ব্যাংক একাউন্ট এড করার মাধ্যমে সেই টাকা উইড্রো করতে পারবেন। ফেসবুক প্রফেশনাল মুড অন থাকলে যে বিষয়ে মনিটাইজেশনের সুযোগ রয়েছে তা হলোঃ
প্রফেশনাল মোড় চালু হলে রিলস অপশন চলে আসবে। রেলস ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা ইনকাম করা যাবে। রেলস ভিডিও মূলত এক মিনিটের কম দৈর্ঘ্যের ভিডিও। যেমনটা আপনারা tiktok এ দেখে থাকেন।
আপনি আপনার ভিডিওতে ইন-স্ট্রিম এডস দেখিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনার ফ্যানদের সাথে যদি ভালো সম্পর্ক থাকে এবং আপনার অনেক জনপ্রিয়তা থাকে তাহলে আপনি সাবস্ক্রিপশন অপশন এর মাধ্যমে টাকা অর্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ যারা যারা আপনার ভিডিওগুলো দেখবে তার বিনিময়ে আপনাকে তারা অর্থ প্রদান করবে। অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ ভিডিও কনটেন্ট এর মাধ্যমে আয় করা যাবে।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর তেমন কোন অসুবিধা নেই। তবে কিছু কিছু অসুবিধা রয়েছে সেগুলো হলোঃ
প্রফেশনাল বোর্ড চালু করলে আপনার প্রোফাইলে কেউ যদি ঢুকে তাহলে সে এড ফ্রেন্ড অপশন দেখতে পারবে না। অ্যাড ফ্রেন্ড এর বদলে ফলো বাটন দেখা যাবে। ফলে আপনাকে যে কেউ চাইলেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবে না। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে হলে আপনার প্রোফাইলের তিন ডট অপশনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে অ্যাড ফ্রেন্ড অপশন দেখা যাবে।
সব দেশে প্রফেশনাল মোড় থেকে ইনকাম করা সম্ভব নয়। কারণ ফেসবুক কিছু কিছু দেশকে ইনকাম করার সুযোগ দিয়েছে। টাকা ইনকাম করার জন্য আপনার দেশ ইলিজিবল হতে হবে। ফেসবুক যদি আপনার দেশকে সিলেক্ট না করে তাকায় তাহলে আপনি ইনকাম করতে পারবেন না। আপনার দেশ টাকা ইনকাম করার যোগ্য কিনা তা জানার জন্য meta for creator ওয়েবসাইটে চেক করতে পারেন।
কেউ যদি আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় তাহলে আপনার ফলোয়ার বাড়বে না। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টি যদি আপনি একসেপ্ট করেন তাহলে ফলোয়ার বাড়বে। যেটা নরমাল প্রোফাইল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
আশা করছি ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। মেটা জানিয়েছে খুব শীঘ্রই সকল দেশকে টাকা ইনকামের জন্য এলিজিবল করে দিবে। কিছু কিছু দেশকে মেটা কোম্পানি টেস্টিং পারপাসে ইনকামের জন্য ইলিজিবল করে দিয়েছে। ফেসবুক প্রফেশনাল মোড এর সুবিধা বা উপকার অসুবিধা তুলনায় অনেক বেশি রয়েছে।
এই পোস্ট থেকে কিছু শিখতে এবং জানতে পারলে আপনার বন্ধুদের কেউ পোস্টটি শেয়ার করে জানাতে পারেন। নিচে কমেন্ট বক্সে ক্লিক করে আপনি সুন্দর একটি কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ
অন্য পোস্ট পড়ুন -